মাঝে মাঝে আমি পরিচালক ধরে সিনেমা দেখি। বিশেষ করে হলিউডের বাইরে। একসময় ধারণা ছিল হলিউডের সিনেমাই সেরা। ইউরোপের সিনেমা বোদ্ধাদের জন্য। আর বলিউড নির্দিষ্ট কিছু দর্শকদের জন্য। সেই ধারণা অনেক পাল্টেছে। এখন নানা ভাষার সিনেমা দেখার সুযোগ হয়। প্রযুক্তি অনেক কিছুই সহজলভ্য করে দিয়েছে। আর তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক বলে কপিরাইটের ঝামেলা খুব একটা পোহাতে হয় না।
আমি এখন বিভিন্ন ভাষার সিনেমার ভক্ত। প্রতিশোধের সিনেমা দেখতে হলে অবশই কোরিয়ার সিনেমা দেখতে হবে। স্পেন অনেক ভালো থ্রিলার বানায়। ডেনমার্ক ও নরওয়ের থ্রিলারগুলোও অনেক আকর্ষণীয়। ফ্রান্স, সুইডেন আর ইতালীয় সিনেমা তো ধারা বদলের সিনেমা। ভালো সিনেমা হয় আর্জেন্টিনায়ও। মেক্সিকোতেও ভালো ভালো সিনেমা হয়। এশিয়ার মধ্যে ইরান তো আছেই। জাপান, হংকং ও তাইওয়ানের সিনেমাও অনেক ভালো। আর আছে চীন।
চীনের সিনেমা নিয়ে কথা বলা যাক। আমি আসলে বলতে যাচ্ছি চীনের একজন পরিচালকের কথা। তিনি ঝ্যাং ইমু। আমার খুব পছন্দের পরিচালক। আমি বলব তাঁর প্রতিটা সিনেমাই দেখার মতো। আমি বেছে নিচ্ছি আমার পছন্দের ৫টি সিনেমা।
১. রেইজ দ্য রেড ল্যানটার্ন: এখন পর্যন্ত আমার দেখা চীনের সেরা সিনেমা। বলা যায় আমার দেখা অন্যতম সেরা সিনেমার তালিকায় এটা থাকবেই। অনেকেই এটিকে ৯০ দশকের সেরা সিনেমা মানেন। আমিও এই দলে। গং লি চীনর খুবই নামকরা অভিনেত্রী। একসময় ঝ্যাং ইমু-গং লি জুটি ছিল খুবই নামকরা। সম্ভবত এই জুটির সেরা সিনেমা।
১৯২০ সালের সময়ের কাহিনি। গৃহযুদ্ধের আগে। অতিদরিদ্র সংগলিয়ান, বয়স ১৯। এক অবস্থাপন্নের ৪র্থ স্ত্রী হয়ে যেতে হয় তাকে। পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক, ভালোবাসা, ঈর্ষা আর ষড়যন্ত্রের গল্প রেইজ দ্য রেড ল্যানটার্ন। নির্মাণ থেকে শুরু করে অভিনয় পর্যন্ত সবাইকে নতুন স্বাদ দেবে রেইজ দ্য রেড ল্যানটার্ন।
২. টু লিভ: আবারও ঝ্যাং ইমু-গং লি জুটি। এই সিনেমার ঘটনা ১৯৪০ সাল থেকে শুরু। জিয়াজেন (গং লি) নামের এক নারী জীবনসংগ্রামের কাহিনি। অবশ্যই প্রেক্ষাপট গৃহযুদ্ধ, সাংস্কৃতিক বিপ্লব, চীনের সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি। ফলে রাষ্ট্র সিনেমাটি পছন্দ করেনি।
ছবিটা সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যমগুলার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে এখনো টু লিভকে অন্যতম একটি সেরা সিনেমা হিসেবে ধরা হয়। বলে রাখি ঝ্যাং ইমু-গং লির মধ্যে একটা প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই জুটির পরের সিনেমা ছিল সাংহাই ট্রায়াড। একটা ক্রাইম থ্রিলার। থ্রিলারপ্রেমীরা মজা পাবেন। তবে ওই সিনেমা করতে গিয়েই তাদের সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। তারপর তারা অনেক দিন আর একসঙ্গে সিনেমা করেননি।
৩. নট ওয়ান লেস: ওয়ে মিনজির বয়স মাত্র ১৩। গ্রামে থাকে। একজন শিক্ষকের পরিবর্তে মাত্র এক মাসর জন্য শিক্ষকতার কাজ পেল। তাকে বলা হলো একজন ছাত্রও যাতে চলে না যায়। খুশি মনে কাজ নিল মিনজি। মানুষজন দরিদ্র। একদিন মিনজি জানল একজন ছাত্র নেই। কাজের সন্ধানে শহরে গেছে। কিন্তু ওই যে শর্ত, একজনও যাতে কমে না যায়। এবার মিনজি একাই রওনা দিল শহরে। খুঁজে আনতে হবে সেই ছাত্রকে।
ঝ্যাং ইমু সিনেমাটি করেছেন একটু ডকুমেন্টারি ধাঁচে। প্রথাগত কোনো অভিনেতাদের নেননি। যারা অভিনয় করেছেন তাদের নাম পাল্টানো হয়নি, এমনকি পেশাও সবার এক। সমালোচনা হচ্ছে এটি শিক্ষা নিয়ে সরকার প্রচারের কাজ করেছে। তারপরেও সিনেমা হিসেবে অসাধারণ নট ওয়ান লেস।
৪. হাউজ অব ফ্লাইং ড্যাগারস: ঝ্যাং ইমু অনেক দিন ধরেই বাস্তবধর্মী সিনেমা বানাচ্ছিলেন। সেখান থেকে কিছুটা সরেও আসছিলেন। এর মধ্যে এই সিনেমাটি একদমই অন্যধারার। ভালোবাসার ছবি অবশ্যই, তবে একই সঙ্গে তুমুল মার্শাল আর্ট ঘরানার ছবি। চোখ ধাঁধানো মার্শাল আর্ট আছে সিনেমাটিতে। আর আছে রঙের ব্যবহার।
গং লি-এর সঙ্গে জুটি ভেঙে যাওয়ার পর ঝাং জিয়িকে কয়েকটি সিনেমা করেন ঝ্যাং ইমু। এর মধ্যেই এটিই সেরা। সেই পুরোনো চীনের গল্প। টাং ডাইনাস্টির শেষ সময়। তাঁদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনেকগুলো বিদ্রোহী গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এর একটি হচ্ছে হাউজ অব ফ্লাইং ড্যাগারস। দুই পুলিশ কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব পরে এই গ্রুপের প্রধানকে ধরতে হবে ১০ দিনের মধ্যে। কিন্তু কেউ জানে প্রধান কে।
৫. কার্স অব দ্য গোল্ডেন ফ্লাওয়ার: ভেঙে যাওয়ার পরে দীর্ঘদিন পরে আবার সেই ঝ্যাং ইমু-গং লি জুটি। একটা সিনেমার আয়োজন যে কত বিশাল হতে পারে তা দেখতে হলে অবশ্যই দেখতে হবে এই সিনেমাটা। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, লাভ, ঈর্ষা, ভালোবাসা, অবৈধ প্রেম-কি নই সিনেমায়। বারবার দেখা যায়।
অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই সিনেমাটা তো আমার আবারও দেখতে ইচ্ছা করছে।
তালিকা কখনোই আরেকজনের সঙ্গে মিলবে না। কেউ কেউ হয়তো আপত্তি করবেন তালিকায় হিরো নেই বলে। এমনকি তার প্রথম সিনেমা রেড সারগামটাও তো দারুণ। কিংবা ফ্লাওয়ার্স অব ওয়ারের কথাও কেউ কেউ হয়তো বলবেন। সবচেয়ে ভালো হয় ঝ্যাং ইমুর সবগুলো সিনেমা দেখে ফেলা।
Haven’t seen the last 2. I’ll consider there a recommendation
LikeLike